প্রপাতজাত

প্রপাত শুকিয়ে গেলে সোঁদা মাটি যখন শুকনো হয়ে ওঠে
তার ওপর যে শহরের শুরু
তার দেহে কুয়াশার ভিত পাকা হয়।
কুয়াশার ধুলো মেখে
টগবগে গাড়ি ছুটে যায়
পথের হদিশ হাতড়িয়ে-
শিশিরের মুগ্ধতা, গতি, মেখে নিয়ে পায়ে।
প্রপাত শুকিয়ে গিয়ে যেসব শহর জন্মায়
তন্দ্রার ভেতরে তেষ্টা তাদের জাগিয়ে রাখে
জল চায়, কাতরায়
মহাপ্লাবনের স্বর্গ স্বপ্ন দেখে তারা।

বেদনা

বরাবরই, বেদনা প্রগলভ নয়, সে বরং মূক।
আপন সঙ্ঘারামে সে ভীষণ ধ্যানী।
তোমার দুয়ারে তার মাধুকরি রোজ
তবু ভিক্ষাপাত্র অকিঞ্চিত ফাঁকা থেকে যায়-
সেটুকু বেদনা।
বরাবরই, বেদনা ভীষণ অভিমানি।
আমাদের জীবনের ক্যাকাফনি-ভীড়ে
তার দেখা সহসা মেলে না।

দেখা

সেই সন্ধ্যায় আমাদের দেখা হয়েছিল।
আমি কালো হতে হতে অন্ধকারে মিলিয়ে গেছি সবে,
তুমি নক্ষত্রের মত কেবলই জ্বলে উঠছিলে।
আমাদের এমন বিরোধ,
আমাদের এমন লজ্জা পরস্পরের অস্তিত্বে অথচ
আমাদের এমন অবসম্ভাবী সহাবস্থান-
যে আমরা চোখ তুলে তাকাতে পারিনি।
যখন সে সন্ধ্যায় আমাদের দেখা হয়েছিল
মহাকালে ফুটেছিল একঝাঁক নক্ষত্র-শালুক।

সেই সন্ধ্যায় আমাদের দেখা হওয়ার কথা ছিল।
খুব বড় একটা প্রাচীরে হেলান দিয়ে বসেছিলে।
অন্ধকারে সেটাকে আরো বড় মনে হয়।
কোনোদিকে তার শেষ নেই।
আশ্চর্য শীতলতা নিয়ে সে ধ্যানমগ্ন।
তুমি চাদরটা আরো জড়িয়ে বসলে।
প্রেমিকের কাছে প্রাচীরের কোনো দায় নেই।
আঁধারের কাছে প্রাচীরের কোনো দায় নেই বলে
আমাদের সেদিন দেখা হয়নি।
তুমি ওপাশে ক্রমশ ম্রিয়মান হলে, আমি অসহ্য।

আজ সন্ধ্যায় আমার কিছুই ভালো লাগছে না।
আমাদের আজ দেখা করার কথা না, কখনো ছিল না।
শুধু, আমাদের আর্তির ভেতর আর্তি ছিল,
সংঘাতে প্রেম।
বহমান নদীর মতই
আমাদের শরীরের ভারে নুয়ে নুয়ে
বারবার বদলে নেওয়া চুম্বন ছিল-
বজরার আলো, টিমটিম…

যেই সন্ধ্যায় আমাদের দেখা হবে
আঁধার নিভিয়ে দেবো নক্ষত্র কোন ছার!

বট

বটের সঙ্গে কথপোকথন চলতে পারে,
তাতে বিশেষ সুবিধা নেই।
ভীষণ স্থিরতা ছুঁয়ে
সে নিজের গভীরে মগ্ন সুগভীর ধ্যানে।
সখ্য হয় না।

তার কাছে চুপ করে বসে থেকে
মাটির গল্পে ঘ্রাণ,
রোদের গল্পে মেখে উত্তাপ শরীরে প্রবল,
পৃথিবীর গর্ভ থেকে উৎসারিত প্রাণের বেদনা
জেনে নেয়া যায়।

কে যেন তলাটা বাঁধিয়ে দিয়েছে,
সে এখন বাড়ে না বরং
বুড়ো হয়।
সে তার পাতায় ধুলো, গায়ে সাদা রঙ মেখে নিয়ে
নির্বিবাদী চুপ।
কিছুই যায় আসেনা।
কেননা সে বোধিবৃক্ষ, বুদ্ধের যাতনা গভীর
তার কাছে জমা আছে
সহস্র বছর।

মাই নেম ইজ রেড: ওরহান পামুক

মাই নেম ইজ রেড মাই নেম ইজ রেড আমার পড়া ওরহানের দ্বিতীয় বই। আগে ইস্তানবুল পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম।

এই বইটার সময়টা ১৬৯১ সালের কয়েকটাদিন। তবে সব মিলে গল্পের ব্যাপ্তি কয়েকশতকের। ঐতিহাসিক উপন্যাস যেমন হয়, ইতিহাস থাকে কম (সেটুকু যথাসম্ভব অবিকৃত রাখা হয়) এবং তার মেজাজে বেশ একটা গল্প বলা হয়। এও তেমনি।

সচরাচর ইতিহাস বলতে যা বুঝি তা হচ্ছে খুনের ফর্দ। সেভাবে দেখলে যে সময়টার কথা বলা হয়েছে পৃথিবী মোটামুটি শান্ত। বিশেষ করে অটোমান সাম্রাজ্য বহিঃশত্রুর ভয়ে ভীত নয়। সুলতান সুলেমানের বেশ শক্ত একটা ভিত্তির ওপর অটোমান সাম্রাজ্য অটল তখন। ইউরোপে রেঁনেসা হয়ে গেছে, ভারতবর্ষে সম্রাট আকবর রাজত্ব করছে এবং কেউই এখন বোকার মত হুঁট করে অন্য রাজ্য আক্রমণে যায় না। একটা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক কাঠামো তৈরী হয়েছে। তবুও এটা অটোমান সাম্রাজ্যের একটি ক্রান্তিকাল। সেই সাথে পুরো মুসলিম পৃথিবীরও হয়ত। ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীলতার ফাঁক গলে যেটুকু আলো আসছিল সেটুকুও বন্ধ হলো এই সময়ে। …

আরো পড়ুন