যখন আমার ঘুম আসে না

যেসব রাতে ঘুম আসেনা-
দূরে কোথাও রাত্রিযুঁথির
গন্ধে বিভোর আঁধার ডাকে
পালিয়ে আয়, পালিয়ে আয়…

একটা তারার এক মহাকাল
পুড়তে থাকার অভিমানের সঙ্গে কোথাও
গোরোস্তানের জোনাকিদের মিল আছে কি?
যেসব রাতে ঘুম আসেনা, সেসব রাতে
তবে কেন সবাই মিলে ডাকতে থাকে
পালিয়ে আয়, পালিয়ে আয়?

ছুটতে ছুটতে চেনা পথে ভুল হয়ে যায়
ভুলতে ভুলতে চেনা বাঁকের মোড় ঘুরতেই
তাকিয়ে দেখি, একটা মানুষ, এক অবয়ব
স্পষ্ট যেনো আমার মতই!
আহা জীবন, এই শহরে, নিয়ন জীবন
তার শরীরে জড়িয়ে যায়…
মানুষটা কই? পথের সঙ্গে মিলিয়ে যায়।
সেও তো ডাকে যখন আমার
গভীর রাতে ঘুম আসে না
পালিয়ে আয়, পালিয়ে আয়…

মনে পড়ে না

মনে পড়লো ওয়ালেটের কোণে
কয়েকটা ছেঁড়া টাকা আছে
পাল্টানো দরকার।
মনে পড়লো অমুকের জন্মদিনের গিফট্ কেনা হয়নি।
তমুকের ট্রীট পাওনা আছে এখনো।
শুধু তোমাকেই আমার মনে পড়ে না।

কুকুরের ডাক শোনা গেলো, বিষাদের মত।
মনে পড়লো বিষাদের নয়, সতর্কতার ডাক ওটা।
মনে পড়লো হিমু, আর দ্বিতীয় প্রহর ঘেরা ভয়।
শুধু তোমাকেই আমার মনে পড়ে না।

জ্বরের ঘোরের মত শৈশব মনে পড়ে,
কৈশোর মনে পড়ে মাতাল হাওয়ার মত,
বিষাদের মত, নিষ্ঠুর উপহাস যেন-
আমাকেই মনে পড়ে যায় বারবার।
শুধু তোমাকেই আমার মনে পড়ে না।

বিষাদের আত্মাস্থিত গভীর বিষাদ,
পৃথিবীর গর্ভে সেই জমে থাকা আগ্নেয় রোষ,
চেরি ব্লসমের মত বৃক্ষের ধ্যানে ফোটা ফুল-
এদের মতই,
তোমাকে আমার মনে পড়ে না কখনো, মনে থাকে।

দূরত্বের কবিতা

যদি তুমি সেইখানে যাও
তোমার-আমার এ আকাশ থেকে গাঢ়তর নীল-
যেখানে আকাশে ভাসে-
যদি তুমি সেইখানে যাও,
মনে রেখো আমাদের ধোঁয়াটে ধূসর
মনে রেখো আমাদের শ্বাসের গভীরে থাকা ঘোর।

আমাদের কবন্ধ বোধ,
আমাদের বিষাদের কাটাকুটি খেলা।
যদি তুমি সেইখানে যাও
যেখানে কেবল হাসি-গান
মনে রেখো মর্মর ধ্বনি- হৃদয়ের, বনপথে শুকনো পাতার।
মনে রেখো বৃষ্টি ও জ্বর।

যদি তুমি সেইখানে যাও
মনে করে কাগজের নৌকো ভাসিয়ো,
চিঠি লিখো, পাঠিও কোথাও।
না পাঠালে রাখলে জমিয়ে,
আমাদের বিরহের দেশ-কাল নেই।

নীলকণ্ঠ

বলেছিল নীলকন্ঠ ফুল,
“যেখানে আকাশ গাঢ় গ্রে,
সেখানেও ভালো থেকো
বুকে নিয়ে পৃথিবীর অমিত গরল, নীল।”
সেই থেকে ভালো আছি।
বলেছিল নীলকণ্ঠ ফুল,
“অকাতরে বেদনা পোহাও।”
নীলকণ্ঠ সেই কথা বলে ঝরে গেছে বুকে নিয়ে ব্যথা-
যার থেকে নীলতর কোনকিছু কখনো দেখিনি।
সেই থেকে ভালো আছি যদিও বা আকাশ ধূসর,
যদিও বা শীতবৃষ্টি নামে,
নিরন্তর বেদনা পোহাতে।

ঝড়ের নাম কনকলতা

কোনো কোনো দিন, আকাশজোড়া মেঘ করে, কাজে মন বসে না। ডেস্কের সামনের জানালার পর্দা তুলে দিই। স্ক্রিনে তাকাই, দেখি না, দূরবর্তী আকাশ ও ইমারতে কিছু খোঁজ থাকে। এমন সব দিনের নাম কোমলগান্ধার।

আজ আকাশ কালো হয়ে এলো মেঘে। সে প্রবল মেঘ। কেউ ছুটলো ছবি তুলতে, কেউ ব্যুমেরাং করতে। বৃষ্টি নামলো খুব। সে বৃষ্টির নাম মল্লার। আত্মায় তার অবিশ্রাম পতনের রেশ। কিন্তু আমি বলতে চাই ঝড়ের কথা।

মেঘেরা স্তরে স্তরে জমা হলো প্রচণ্ড তর্জনে। সবকিছু ভেঙেচুরে উপড়িয়ে ফেলার রোষ। বাইরে যে ঝড় ওঠে তার নাম কালবৈশাখি। আর ভেতরের ঝড়ের নাম কনকলতা। কেন নয়? বুকের খুব কাছে যে গুমরিয়ে ওঠে, জমিনের কাছে।