পুনর্জন্ম

বুড়ো হতে শুরু করা তেইশ বছরে
প্রিয়তমা মানুষীর কাছে-
প্রিয়তর হতে চেয়ে বুকে মুখ গুঁজে কাতরতা
ঢেলে দিয়ে দেখি
যদি ধ্বংসের দরজায় নির্বাণ এসে ধরা দেয়।

আমি এই খুন হতে থাকা সময়ের
বুকের পাঁজরে ঘুণ হয়ে বেঁচে আছি।
এমন বাঁচার ছলে
চুপ করে পিতার সফেদ
যতটুকু ধরা ছিল বুকের ভেতরে
ক্রমশ ময়লা করে ফেলি।
এই গাঢ় নিরাশার শীতে
কুকুরকুণ্ডলী শুয়ে
গাঢ়তর ওমের আশায়
যদি আমি দেহজ শিশির ছুঁয়ে কেঁদে ফেলি
বেদনার থেকে আমি পুনর্জন্ম নিই।

পরিচিতা

পরিচিতা
এই বকুলগন্ধী কাল
আমাদের নয়।
আমাদের ঝরাপাতা,
রক্তের দাগ
দগদগে কালো পীচ
ঝলসে ওঠার নাক্ষত্রিক দিন।
পরিচিতা শোনো,
আমাদের নেই কথকতা অবসর।
শিরোচ্ছেদের পরোয়ানা আঁটা দরজায়।
ধমনীর থেকে ছলকে পড়ছে লাল।
আমাদের দেহ হিম
চোখের সামনে নিথর নির্বিকার।
পরিচিতা জানো?
আমিও বেসেছি ভালো।
ঘাসফুল বুকে
বড় মমতায় আঁকড়াই।
নিমগ্নরাতে স্পর্শ করেছ যেই
আমিও বেজেছি কামনার সপ্তকে।
পরিচিতা,
এই পরিচিত বহুদিন
হয়ত হারাবে
বিস্মরণের স্রোতে।
নির্ঘুম রাত
ক্রমশ পাড়াবে ঘুম
পরিচিতা তবু
কপালে আঁকছি চুম।

বদ্বীপের কথা

পায়ের তলায় মেঘ ঘোর কুয়াশায় আমি হেঁটে
সিলিঙের নীল ছুঁই। বয়ে যায় যেই জাহ্নবী
তার দিকে তাকাতেই বদ্বীপের সমুদ্রতটে
মানুষ দেখিনা আমি। পরিচিত আমার পৃথিবী
অজাতমিত্র বুঝি! কেউ নেই বোঝে সে বেদনা
যার তাপে পুড়ে ফেঁপে বার বার সভ্যতা সব
ফুলে ওঠে বেড়ে ওঠে। মানুষের ঘামে যত নোনা
দামহীন। বলে কেউ? মানুষেরা সবাই নীরব।

কতগুলো মৃত্যুর, কতগুলো ক্রুসেডের দামে
আমার আয়েশী দেহ, আমার এ কলমে কালির
যোগান এসেছে? আর ‘সুখ’ এই আফিমের নামে
কতবার শোভেনিস্ট দেহভোগ করে পৃথিবীর?
পায়ের তলায় মেঘ, মেঘে জমা জল কান্নার।
হিসেব চাইবে ঠিক বেহিসেবি বেঁচে থাকাটার।

কথাগুলো

আঙুলের ডগায় কথাগুলো
জমে থাকে।
লেখা হয়না আমার,
ত্বক ফেটে ফিনকি ফিনকি বেরোলে পারত!
বুক ফেটে বেরোলেও মন্দ হত না।
কথাগুলো জমে থাকে
বলাই হয়না।

আকাশের দেয়ালিতে ছেদ ফেলে
ছেঁড়াখোড়া মেঘ
আসে যায়।
আসে যায়না কিছুই আর
আমার, তোমার।
আমি, তুমি আর মাঝখানে শহরের ক্যাকাফনি,
আর ছেঁড়াখোড়া মেঘ
আমার তোমার মাঝে ব্যবধান
গাঢ় করে তোলে।
কোনো এক এনার্কিস্ট অন্ধকারে-
আমি কবে শেষ মুখ দেখেছি তোমার?

শেষমেশ বলা হয়না কিছুতে।
এনার্কি থাকে
মেঘেরাও থাকে তাদের দুরাভিসন্ধি নিয়ে।
তুমি থাকো
আমি থাকি
আমরা বলে তো আর কিছুই থাকেনা।
কথাগুলো সশব্দে বেরোতে পারতো চিৎকারে।
ভয়াবহ কথাগুলো
আমি রঙ যাদের চিনিনা
আমি ঘ্রাণ যাদের চিনিনা
আমি জানিনা কেমন তারা
যারা আমার আপন নয়
সেইসব কথাগুলো বেরলে পারত।
দোদুল্যমান পেন্ডুলাম দেহের ছড়া কাটা নামতায়
এঁকেবেঁকে চলে যাওয়া রক্তের স্রোতে
আমারই কথাগুলো
যেগুলো আমার নয়
বলা গেলে বেশ হত।
বেশ ভালো হত।

বাঁশপাতা খাম

চিঠিগুলো দেখি, খাম পড়েনাই চোখে।
শুভ্র শরীর প্রেমের বুনটে ঠাসা
সময়ের ছাপ ফ্যাকাসে শরীরজুড়ে
চিঠিগুলো বুঝি বস্তাবন্দি নেশা।
চিঠিগুলো জানে প্রণয়বাক্য যত
রেট্রো-জীবনে বিরহের হাহাকার।
চিঠিগুলো জানে লিখবার অলসতা
বারবার ছবি তুলবার আবদার।
একজন নারী বড় বেশি সাদামাটা
কীভাবে সে হয় বড় বেশি মোহময়?
সে ভালো জানে যে দুপায়ে ভেঙেছে কাদা,
মাটির মানুষ খাঁটি নিষাদের ছেলে
বড় স্বপ্নটা বুকে নিয়ে বড় করে
কুঁড়েঘরে খুঁটি রাজপ্রাসাদের শ্লাঘা।

চিঠিগুলো ক্রমে চুম্বন হয়ে ঝরে
চিঠিগুলো হয় সাদা শার্টের ঘাম।
খুব ছোট ছোট আমার আঙুল গুলো
আঁকড়ে ধরেছে চিঠি লেখা সেই হাত।
বিছানার পাশে ব্ল্যাকবোর্ডের কালো
আমি এঁকে গেছি চকপেন্সিলে হাসি,
ছুটির সকালে খাতাভরা কাটাকুটি
চিঠি লেখা হাত চেনালো বর্ণমালা।

আমার জন্য চিঠি আসেনাই কোনো,
আমার পিতার তামাটে শরীরটুকু
আমার জীবনে বাঁশপাতারঙ খাম।
খাম খুললেই শুভ্র হৃদয় মেলে
খাম খুললেই একটা স্বচ্ছ চোখ
খাম খুললেই চিঠি লেখা এক হাত
মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর কথা লেখে।
নিজের জন্য আমি নিজে হই চিঠি
আমার পিতাই তার বাঁশপাতা খাম।