আদরের মাকড়সা

ঘুমিয়েছে।
আদরের মাকড়সা এইতো কেবল
পাঁজরের আবডালে ঘুম।
সুমন্দ হাওয়ায়
দোলে জাল ঘেরাটোপ,
আটপায়ে আদরের
গাঢ় অসাড়তা মেখে নিয়ে
পাঁজরের আবডালে ঘুম।

বেয়ে বেয়ে উঠেছিল
শরীর ও শরীরের অলি-গলি
অন্ধি-সন্ধি সব জেনেবুঝে নিতে।
সে ষড়যন্ত্রী অভিপ্রায়ে
মুছে দিতে আরসব পরিচিত স্পর্শের রেশ
সারাদেহে বুনেছিল আদরের গভীর বুনট।

তারপর
আর্দ্র উষ্ণ
বুকের ফাটল দিয়ে আগ্নেয় লাভাস্রোতে
পুড়িয়েছে
জ্বালিয়েছে।
আর শিহরণ
ঠোঁট ফেটে রক্তের মত
চোখ ফেটে জল যেন
ভাসিয়েছে
ডুবিয়েছে।
নাভিমূলে
জমানো অতীত
টঙ্কারে জাগিয়েছে
বাজিয়েছে বীণার মতন।
আরবার শিহরণ
জলপ্রপাতের মাদকতা যেন
পাহাড়ী নদীর মত
আমি আর ভাসবার ইচ্ছে রাখিনি।
ডুবিয়েছে
ডুবতেই ডুবিয়েছে ফের।
কপাল ও কপোলের সীমারেখা মুছে দিয়ে
আদরের মাকড়সা
নেমে গেছে ঠোঁট ও চিবুকে,
কাঁধ ও কণ্ঠ বেয়ে
হৃদয় ও আনুসাঙ্গিক পৃথিবীতে
রেশমি সুখের জাল আটমহল প্রাসাদ যেমন।
তারপর গাঢ় আদরের অসাড়তা
ঘুম এনে দিলে তার চোখে
ঘুমিয়েছে।
আদরের মাকড়সা এইতো কেবল
পাঁজরের আবডালে ঘুম।

অভাব

আমি আসলে এরকম না।
ইলেক্ট্রিক্যাল তারে কোনো ঘুড়ি দেখে
কখনো মনে হয়নি,
দুদিন আগেও ঘুড়িটা আমার ছিল।
একগুচ্ছ মার্বেলের শোকে
দীর্ঘ দুপুর মনখারাপের ঘোরে, কাটেনি কখনো।
প্রকৃত প্রস্তাবটা এরকম,
আমি বিরহবিলাসী নই।

পৃথিবী মস্তবড়, ছোট ছোট পিক্সেলে ভেঙ্গে
মুখোশের দুনিয়ায়
আমি কিছু মুখ খুঁজে
সখ্য পাতাই।
তবুও অন্ধকার ঘন হয়ে এলে
এতটাই ঘন
যদিনা ছুঁয়ে দেখছি
যদিনা আমি শুনতে পাই
মিথ্যে বোধ হয় সমস্ত পৃথিবী।
প্লেলিস্টে সানাই বা বেহালার
আর্দ্র সঘন জয়জয়ন্তী
চাদরে ছাপানো ফুল
একটা কিছুর অভাবের অভাব জানায়।

মহাকাল

সে তার অন্ধকার বয়ে এনে আপন শরীরে
আমার সিঁথানে মাখে ঘোর
আর সব নৈঃশব্দ্যে ম্লান ব্যাকুলতা
আমাকে ঢেকেছে গাঢ় স্নেহ-আলোয়ানে।

আমি তার মেঘময় চুল খুলে
সৃষ্টির আঁধার দেখেছি।
আমি তার স্তনবৃন্তে আগত পৃথিবীর
সবটুকু প্রাণের ক্ষুধার, তৃপ্তি দেখেছি।
আমি তার মহাকালে
খুব চুপ ডুব দিয়ে ভেসে
পায়ে পায়ে তল খুঁজে
হাল ছেড়ে বেঁচেছি আবার।

এ শরীর, শরীরের ভাঁজ
এই গাঢ় দেহজ শ্রাবণ
এ প্লাবন, ঝড়ের আভাস
এই কাল, মহাকাল, কালের অতীত কোনো
বোধ বয়ে এনে
জমিয়েছে।
জানিয়েছে,
বুকের কবচ খুলে
কানের কুন্তল
আমি কর্ণ নই তবু
লিখে দিলে বেঁচে থাকা, মৃত্যু আমার
সহজেই পৃথিবীর সিম্ফোনি
কোমলগান্ধারের রঙ মেখে থাকে।
আর
তার ঠোঁটে মহাকাল থমকে দাঁড়ায়।