মাই নেম ইজ রেড: ওরহান পামুক

মাই নেম ইজ রেড মাই নেম ইজ রেড আমার পড়া ওরহানের দ্বিতীয় বই। আগে ইস্তানবুল পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম।

এই বইটার সময়টা ১৬৯১ সালের কয়েকটাদিন। তবে সব মিলে গল্পের ব্যাপ্তি কয়েকশতকের। ঐতিহাসিক উপন্যাস যেমন হয়, ইতিহাস থাকে কম (সেটুকু যথাসম্ভব অবিকৃত রাখা হয়) এবং তার মেজাজে বেশ একটা গল্প বলা হয়। এও তেমনি।

সচরাচর ইতিহাস বলতে যা বুঝি তা হচ্ছে খুনের ফর্দ। সেভাবে দেখলে যে সময়টার কথা বলা হয়েছে পৃথিবী মোটামুটি শান্ত। বিশেষ করে অটোমান সাম্রাজ্য বহিঃশত্রুর ভয়ে ভীত নয়। সুলতান সুলেমানের বেশ শক্ত একটা ভিত্তির ওপর অটোমান সাম্রাজ্য অটল তখন। ইউরোপে রেঁনেসা হয়ে গেছে, ভারতবর্ষে সম্রাট আকবর রাজত্ব করছে এবং কেউই এখন বোকার মত হুঁট করে অন্য রাজ্য আক্রমণে যায় না। একটা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক কাঠামো তৈরী হয়েছে। তবুও এটা অটোমান সাম্রাজ্যের একটি ক্রান্তিকাল। সেই সাথে পুরো মুসলিম পৃথিবীরও হয়ত। ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীলতার ফাঁক গলে যেটুকু আলো আসছিল সেটুকুও বন্ধ হলো এই সময়ে।

গল্পটা সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব এবং আগ্রাসনের। আগ্রাসনটা ধর্মীয়। দ্বন্দ্বটা ইউরোপীয় চিত্রকলার সাথে অটোমান চিত্রকলার। মনে রাখা দরকার রেঁনেসা পরবর্তী ইউরোপ যেখানে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মত শিল্পীর আবির্ভাব তার বর্ণচ্ছটা কম না। এদিকে মুসলিম চিত্রকলার মূল উদ্দেশ্য বই অলঙ্করণ। দুই ধরণের চিত্রকলার দর্শনে বিশাল ফাঁরাক। এই দ্বন্দ্বটা বইটার মূল বিষয়গুলোর একটা। আর চিত্রকলার ওপর যে ধর্মীয় নিপীড়ন দেখা গেলো তার সময়কালও ঘটনার অনেক আগে থেকে বিস্তৃত। হীরাট নগর ছিল মুসলিম শিল্পচর্চার পীঠস্থান। সেই শহর একরকম গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় (পিরিমকুল কাদিরভের ‘বাবর’ বইতে তার বেশ ভালো বিবরণ আছে)। কামাল-উদ্-দীন বেহজাদের মত মায়েস্ত্রোরা ছিলেন হীরাটে। মূলত এরকম বারবার বিতাড়িত শিল্পীরা বিভিন্ন সুলতানদের কাছে কাজ করতে করতে, তার সাথে চাইনিজ চিত্রকলার মিশেলে একসময় অটোমান চিত্রকলায় রূপ নেয় যার মৃত্যু বইটার উপজীব্য।

বইটার গল্প বোনার পদ্ধতিটা ভালো লেগেছে। চরিত্রগুলো গভীর, মনস্তাত্ত্বিক সংঘাতগুলো আবেদন রাখে। বইয়ের গল্পটা আমি বলতে চাই না। ঝালটা নিজের মুখে খাওয়াই সমীচীন।