নিজের পায়ের শব্দে আঁতকে উঠি, ও কি আমার পা?
বুকের কাছেই জমজমাট অন্ধকার,
হাট বসেছে সেখানে,
আমি টিপ কিনি, তাঁতের শাড়িও।
একটু এগোলে স্টেশনের মাঝখান দিয়ে নদী
আর আমি এখন ট্রেনে তো তখন নৌকায় চড়ে বাড়ি ফিরি।
কম্পার্টেমেন্টে হেঁটে হেঁটে হঠাৎই নিজের পায়ের শব্দে কেঁপে উঠি!
ও কি আমার পা?
লেফট্ রাইট মার্চ ফরওয়ার্ড!
ও কি আমার পা?
দেখুন মশায়, ডানপন্থীরা ডান পা ফেলবে আগে…
ও কি আমার পা?
দেশের উন্নয়নে আমরা বদ্ধপরিকর, আমাদের পদযাত্রা অব্যাহত থাকবে…
অন্ধকারের ভেতরে একটা ট্যাংক গুঁড়িয়ে দিল সবকিছু।
মাথার ওপর কিছু উড়ে উড়ে পৃথিবী কাঁপিয়ে তোলে।
আমার পা দুটো বেসামাল
ছুটে যায় এদিক-ওদিক।
আমি অন্ধকারে যাবো।
আমাদের যৌথ আঁধারে।
আমাদের যৌথ আঁধারে আমরা তো ভালোই ছিলাম।
আমাদের নিজস্ব গান, শিশিরে ও নিয়ন সাইনে-
পদাবলী, প্রেম, সেইসব পুতুল খেলার দিন।
সেইসব ব্যথার বোধন,
একশো আটটি পদ্ম সেখানে, ব্যথাতুর, নীল।
কেবলই বুকের কাছে তোমার প্রতিমা,
আমিই স্তাবক ও পূজারি,
হাইকুর মত তুলির একটি টানে চক্ষুদান।
স্টেনগান, ক্ষুধা, ক্যাকাফনি, পৃথিবীর পচাগলা লাশেদের ভীড়ে,
আমি শুদ্ধচারী পুজোয় বসেছি।
আমি সেখানেই যেতে চাই,
ট্রেনে-বাসে ঝুলে,
নৌকোয় গাদাগাদি,
সাঁতরে বা ডুবে-
আমি সেখানেই যেতে চাই।
তবু আমার পা দিকবিদিক ছুটতে থাকে।
খচমচে চামড়ার জুতো।
ও কি আমার পা?
হাজার মানুষ চলে, বিস্মৃত, নির্জীব, সেই পথে দুড়দাড় হাঁটে…
ও কি আমার পা?
সভ্যতার ফসিলে আমার পা আটকে যাচ্ছে স্থবির,
রগ ও পেশি ব্যথায় টনটন করে।
মানুষের পায়ে পায়ে আমি পা মেলাতে পারি না।
প্রলাপের মত এলোমেলো পদক্ষেপে
কেবল হুমড়ি খেয়ে পড়ি।
চেয়ে দেখি ওই আমার পা নয়,
এমনকি আপাদমস্তক আমার কিছুই আমার নেই।