নিওলিথ

দূরে দূরে ঘুরে ঘুরে বৃষ্টিতে ভেজে-
প্রস্তরীভূত জ্যোৎস্নার থেকে কুঁদে বের করা
তোমার শরীর, নিওলিথ।
সে কেবল প্রবলতা জানে,
সেই মেঘ-
সে কেবল ঝরোঝরো
আমাদের সামগ্রিক পতনের রেশ বুকে নিয়ে
ঝরে যায় যূথবদ্ধ।
ভিজে যায় তোমার শরীর, নিওলিথ।
অরণ্যানীর থেকে বহুদূরে এইসব পাথরের সারি,
রডের পাঁজর-
এই সব নিস্প্রয়োজন অতিকায় দেহ ঘিরে আলো-
আমাদের সুখ থেকে বহুদূরে আত্মমগ্ন ধ্যানী।
সেখানে আদিম মেঘ ঝরে যায় মাদলের তালে আর-
ভিজে যায় তোমার শরীর, নিওলিথ।

ব্যথা

সারারাত হিমে ভিজে ঘাসের ব্যথার কথা শুনি।
কে তেমন বলেছে আমায় আর?
যে এসেছে চলে যেতে শুধু-
নক্ষত্রনিবিড় রাতে নেমে এসে হিমের মতই
উবে যায়
সেই ব্যথা কে জেনেছে ভালো?
সে ব্যথা নিদাঘে নেই।
ভিক্ষুর সঙ্ঘারামে সে বোধির যোগী নেই কোনো।
প্রবল শীতের মত সেই ব্যথা বুকে বসে থাকে,
ফিসফিসে কথা কয়,
চোখের আড়াল হলে অভিমানি হাসে।
অরণ্যানীর মত সে সবুজ গাঢ়,
কখনো বা কালো মনে হয়,
কখনো সে বেগুনি ভীষণ অভিজাত,
কখনো সে এলোচুলে চুপ করে কবিতা শুনেছে।
আমি তাকে এখনো চিনিনি।

কার্নাল অ্যাপল্

মূল: পাবলো নেরুদার ‘Carnal apple, Woman filled, burning moon’

নিষিদ্ধ গন্দম, সুডৌল নারীর দেহ, প্রজ্জলিত চাঁদ,
শৈবালের গাঢ় ঘ্রাণ, মাটি আর বজ্রের প্রবল দ্বৈরথ,
সে কোন গভীর বোধি তোমার সুরম্যে লুকায়িত?
কোন সে আদিম রাত মানুষ মেখেছে তার সমস্ত ইন্দ্রিয়ে?
ভালোবাসা, জল আর নক্ষত্রের পথে অভিযান কোনো।
শ্বাসরোধী বাতাসের, ধুলো ঝড়ের ভেতরে
ভালোবাসা অশনি-যুদ্ধ এক।
আর দুই দেহ ক্রমশই ক্ষয়ে যাবে মধুর জহরে।
অজস্র চুম্বনে, তোমার সমস্ত ক্ষুদ্র অসীমতা আমি ঢেকে দেবো।
তোমার কূল ও গাঙ, ছোট ছোট গ্রাম,
আর কামনা-অগ্নি, আনন্দ থেকে উৎসারিত,
শিরা-উপশিরা বেয়ে চলে নিশি-অভিসারে
শুধু, আর কিছুমাত্র নয় এবং শুধুই, অন্ধকারের আলো হবে তাই।

মুক্তি

মুক্তির চেয়ে প্রিয়তর কোনো সুখ নেই
কোনো গান নেই এত সুমধুর
কোনো দীঘি এত শান্ত দেখিনি-
স্থিরতা জেনেছে এমন।
মুক্তির চেয়ে প্রিয়তর দুঃখ এখনো হৃদয়ে বাজেনি।
প্রিয়তর আর কোনো বোধ মুক্তির চেয়ে-
কোনো ছায়াপথে, আলোয় আলোয়
আমায় এখনো স্পর্শ করেনি।

আমাদের সামগ্রিক অন্ধকারের সমস্ত ক্যাকাফনি
সমস্ত পাঁশুটে রঙ
নির্বিবাদী কীটের বেঁচে থাকা
কেবলই অগভীর পাকে আমার গেঁথেছে।
যদি মুক্তি মিলত নিজের থেকেই একবার!
আমি ঘুরে ঘুরে মেহগনি বীজের মতন
পৃথিবীর স্বত্ত্বায় নির্মোহ আছড়ে পড়তে থেকে
কেবলই বুকের ভেতর রিনিরিনি
সুমন্দ বাতাসের গান-
শুনতাম।
ব্যক্তিগত অন্ধকার ছিঁড়েখুঁড়ে নক্ষত্রের মত
কেবল দীপ্তিমান সেইসব দিনে
বকুলের সুঘ্রাণে উপচিয়ে বুকের উঠোন
মহাবিশ্বে অবিমিশ্র ছড়িয়ে যেতাম অবিরত।

দ্বৈরথ

ময়লা মেঘের ভাঁজে চাঁদ ডুবে যায়
বিশুদ্ধ জ্যোৎস্না ছড়িয়ে অবিরাম-
আমি জানলায় দেখি।
তুমি ডোবো কার ঘোলাজলে?
কার কাদা তোমার শরীরে বোনে প্রেম?
সেসব খবরে কাজ নেই।
আমি যত পুড়ি, তুমিও পুড়বে ততটাই, জেনো,
আমাদের দ্বৈরথ রাষ্ট্র হবে অনন্ত ত্রিকালের সব খবরের ভীড়ে।

আমাদের চেনাশোনা সবকিছু ভেঙেচুরে যাবে।
সব গলিঘুঁজি আর শরীরের অন্ধি-সন্ধি ব্যেপে
আমাকেই পাবে দেখো- অতীতের ভুত।
তোমার স্নেহার্দ্র রোষে,
জন্মান্তরে একমাত্র আমারই অধিকার!