চাঁদ: শহরনামা ০২

কিছুতেই আমার সময় হচ্ছে না।
মাটিতে, পায়ের দিকে তাকিয়ে হাঁটছি।
হলুদ দেয়ালে জ্যোৎস্নার চুনকাম।
ঘাড়টা উঁচিয়ে আমি চাঁদ দেখিনি, দেখিনি।
বরং দেখেছি,
এক উজ্জ্বল আকাশ ঠিকরে দিচ্ছে আবছা আলো।
বিষণ্ণ।
এক শঙ্কা মূর্তিময়,
আমার পায়ের নীচে আক্রোশে ফোঁসে।
একগুচ্ছ ঘাসের পদদলনার অভিমান।
কালো পীচ, কালো তবু, উজ্জ্বল মৃত্যুর মত।
মৃত্যুর ছায়া, পেপারে-খবরে লাশ।
এবং প্রলাপ।
চাঁদের কবিতা লিখতে গিয়ে প্রলাপ বকছি।
এখানে আসলে আলো নেই।
আপনারা যেমন জানেন
চাঁদের আলোটা নিজস্ব নয়,
আমি তেমনই জানি পৃথিবী রক্তাক্ত হবে
উর্বরা হবে না কখনো।
কারন এ সভ্যতা জ্যোৎস্নার মতই অলীক।

এপ্রিল ০৩, ২০১৫, ১০:০১ pm
খুলনা

পথ: শহরনামা ০১

হাঁটতে থাকলে পায়ের তলায় শহরটা
ক্রমে ক্রমে জেগে ওঠে।
অপরিসর পথের কোণা ঘেঁষে সারি সারি ল্যাম্পপোস্ট
চোখ রাঙিয়ে দাঁড়িয়ে।
মানুষ, কুকুর, ফুচকাওয়ালা, বাদামের খোসা,
ভিখারি, দাতাকর্ণ, দেয়াল, ব্যানার,
ব্যানারের পরে কুৎসিত হাসি,
দেশপ্রেমিক বহুজাতিক কোম্পানী,
আমার স্বপ্ন, তোমার কাজল,
কাজলের মত অন্ধকার শহর,
শহরের মত সয়ে থাকা অভিমান,
পৃথিবীর মত চাপা গ্লানি।
আমি দেখি
আমি শুনি
আমি ঘ্রাণ পাই।
পায়ে মাড়িয়ে প্রচুর
আমি হাঁটি সতের বছর।
পথ হল পিতার মতই।
নাকি পিতারাই স্বপ্ন দেখিয়ে
পায়ের তলায় হয় বেপরোয়া পথ?
পথের কাহিনী হয়ে বেঁচে থাকে আমার ভিতরে।

এপ্রিল ০৩, ২০১৫, ১২:৩০ am
খুলনা

ভিখারি

আমি কেন হাঁটতেই থাকি?
পীচগলা মোহ মেখে পায়ের তলায়,
চাতকের তৃষ্ণায় ঘামে ভেজে শরীরে ভাঁজ।
আমি কেন বারবার
হেঁটে হেঁটে তোমার উঠোনে হাত পাতি?
তীরে আঁকা গণ্ডি ভীষণ।
আমাদের অতীতের মুখ দেখা মানা ছিল।
তার ইতিহাস, তীরে আঁকা গণ্ডি ভীষণ।
এপাশে রাবণ আমি, ওপাশে তোমার বনবাস
তুমি কি যোগিনী বেশে
আমারই ধ্যানমগ্নতায়
বারবার চেয়েছিলে, তাকে যার
শরীরে পড়েনি ঢাকা
হৃদয়ের নিবিড় মমতা?

মার্চ ২৬, ২০১৫
খুলনা

জোড়ের শালিক

তোর চোখে চোখ রেখে ফিরে গেছি যেই
শহরের ছবি সব জমকালো আমায় গিলেছে।
আরব্ধ বেদনার সুর,
বাজেনি কোথাও সেই রাতে,
সিগারে উষ্ণতার তৃপ্তি কমেনি এতটুকু।
প্রাচীন নগরে আমি ঘুম ভেঙ্গে তোকে ভুলে গেছি।

ভুলে গেছি আর কেউ শীতের চাদরে,
ঢাকেনাই এত স্নেহে আমার শরীর।
আর কেউ তোর মত বলে নাই
দু’স্তনের নীচে, হৃদয়ের খুব কাছ ঘেঁষে
কোনভাবে ভালোবাসা পথ খুঁজে নেয়,
আর কারো দেহে,
আরো কিছু স্বেদে ঘ্রাণ ছড়িয়ে নিবিড়,
কিভাবে লেপ্টে থাকে, মানুষের মগজে-মননে।

কীবোর্ডে অক্ষর মোছে,
আমার লেখার কালি শেষ হয়ে যায়না কখনো,
তোর আকাশের নীচে আঁধার ঘনালে,
পেশী ও মজ্জায় কেটে বসে গেলে ব্যথা
আর আমি ক্লান্ত যখন
দেখে দেখে চামড়ায় ব্লেড দিয়ে কাটাকুটি খেলা,
তোর কাছে নিষ্প্রভ মনে হয় আমার বেদনা।
তখন কিভাবে আমি সেজে বসে থাকি তথাগত?
আমার ইচ্ছে খুব,
তোর পিঠে এঁকে দিতে রঙ্গীন গ্রাফিটি,
কামনার সুতো ছিঁড়ে উড়ে যাবে একশো ফানুস,
আমরা তাদের গুনে শেষ করে,
রাতভর ছায়াপথে হেঁটে
ভোর ভোর সূর্যের থেকে নিয়ে মাখবো আবীর।
আমাদের ভাগ্য ফেরাতে
আমার ইচ্ছে খুব,
তোর হবো জোড়ের শালিক।

থাকবো না

যখন কোথাও থাকবো না আমি
তখন? কিছুনা।
যতক্ষণ আছি
জেনো
অন্ধকারে পরস্পর
অনিবার্য পতন চাষ করে যাবো।
যখন কোথাও থাকবো না আমি
পতনোন্মুখ না হয়ে থমকে যেয়ো।

যখন এখানে অথবা সেখানে
যত্রতত্র আমার উপস্থিতি
তোমায় কখনো বিরক্ত করবে না আর।
কপালের পরে হাত রাখবে না
বুকের গভীরে চুম আঁকবে না
তখন? কিছুনা।
দিন কেটে যাবে।

এবং দিনের শেষে আরো দিন
প্রতিদিন, প্রতিটাদিন তখন
কেটে যাবে।
এক নক্ষত্র বারুদ জ্বলছে যার বুকের ভেতরে,
তাকে ছাইচাপা দিলে
অভিমানী পৃথিবীর গণ্ডি তার
ক্রমশই ছোট হয়ে আসে
আগুন নেভেনা।
যখন আমার থাকা হবেনা এখানে
জেনো
তখন? কিছুই হবেনা তোমার।

Sep 18, 2015, 2:39 AM
Dhaka