শিউলি

আঁধারের বুকে
একসারি নক্ষত্র বুনে দিলে
ভোরবেলাটায় তারা ঘাসের ওপর
শিউলির ঘ্রাণ মেখে ঝরে পড়ে টুপটাপ।

বুকের ভেতরটায়
সবুজ সবুজ দিনগুলো
ফ্যাকাসে রক্ত দিয়ে বয়ে যায়
গাঢ়।
আর মেঘলা দিনগুলোয়
যদি একঝাঁক পায়রা ওড়াও
ভোরবেলাটায় তারাও জানো কি?
ঘাসের ওপর
শিউলির ঘ্রাণ মেখে ঝরে পড়ে টুপটাপ।

ঝরে পড়লে ব্যাকুল কামনায়,
ঝরে পড়তেই
আহা! বুকের পাঁজরে
শ্বাসের দখিন বাতাসের মত
সুঘ্রাণ বেঘোরে ঢুকে পড়ে
আর কোথাও সেখানে
এক উঠোন সবুজের মোহ,
ভোরবেলাটায় তারা ঘাসের ওপর
শিউলির ঘ্রাণ মেখে ঝরে পড়ে টুপটাপ।

জড়িয়ে নিয়েছি আমার পৃথিবী-
মানুষের সহজাত সর্বনাশের নিমগ্নতায়।
কাল পীচ, অন্ধকারে গাঢ় মিশে মিশে
কিভাবে জানিনা জমাট বেঁধেছে
আমার শরীরে।
যদি আঁকো চুম্বন (হোক উপহাসে)
চুম্বনগুলো-
ভোরবেলাটায় ঘাসের ওপর
শিউলির ঘ্রাণ মেখে ঝরে পড়ে টুপটাপ।

নক্ষত্র, পায়রা আর স্বেদসিক্ত শ্বাস, চুম্বন
জগতের সমস্তকিছুই
এই দুঃখের দিনশেষে
ভোরবেলাটায়
নিশ্চিত
শিউলির ঘ্রাণ মেখে ঝরে পড়েবেই টুপটাপ।

Sep 17, 2015, 12:43 AM
Dhaka

নারী ও নগর: শহরনামা ০০

শহর গিলছি প্রাণপণে
এবং মজ্জাগত অস্থিরতায়
টাওয়ারের বাতির মত লাল চোখে দেখি
চলে যায় কিছু মুখ,
যারা আর ফেরত আসেনা।

এখানে এ কথাগুলো
অভিধান থেকে ছেঁড়া শব্দে গাঁথিনি।
নাগরিক স্থবিরতা
গতি ব্যথা প্রণয়ের কথকতা
গ্রাফিটি এঁকেছি।
ল্যাম্পপোস্ট-বর্শায় আঁধারের পিঠ ফুঁড়ে
দাঁড়িয়েছে যোদ্ধা যুবতী
আমার শহর!

রক্তজবার মত ব্যাকুলতা বয়ে
আমি খুব রাঙা আর
ছাতিমের মত
বুকভরা কামনা-সুবাস
আমাকে জাগিয়ে রাখে প্রহরে প্রহর।
সারি সারি ল্যাম্পপোস্ট-প্লাজা-ক্যাফে-নিয়ন সাইনে
অভিমানী নিঃশ্বাস-
জেগে আছে নগরী আমার।
এভিনিউ-স্ট্রীটগুলো প্রগলভ তরুণীর মত
উচ্চারণে অনর্গল
শহরের বিপরীত কোণ থেকে গল্প সাজায়।
আমি শুনি,
আমি খুঁজি খুব,
কারো আদলের মুখ,
কারো ঘ্রাণ খুব পরিচিত।

বাতিগুলো মেপে মেপে
সাজালো কে আমার শহরে?
ফাঁকে ফাঁকে জমে আছে ঘন
ততটা অন্ধকার
যতটা আমার প্রয়োজন
বলে দিতে প্রণয়ের কথা
এঁকে দিতে কাতরতা-গ্রাফিটি আমার,
কানে কানে বলে দিতে
আমি বুকে বয়ে চলি আরেক নগর,
স্কাইস্ক্র্যাপারের সারি
বেদনা-আকাশ ছুঁয়ে দিলে
বিষাদের ছায়া পড়ে
রাজপথে তার।
মেহগনি বীজগুলো
ঘুরে ঘুরে ঝরে যেই মসৃণতায়
রাতজাগা আলোগুলো
যেভাবে কেটেছে দাগ পেলব আঁধারে
সেভাবে ব্রাশের স্ট্রোকে দেয়ালে দেয়াল
জমা রাখি আমার বেদনা,
যেভাবে জমিয়ে রাখে শহর আমার।

২০১৪-০৭-২৯ ১৭:৩৫
খুলনা

কামনার সনেট

আঁধার সঘন হয়- সন্ধ্যা নেমেছে নিস্প্রভ।
কিছুকাল আগে ছিল যে আবীর ছড়ানো আকাশে,
ব্যাথায় বেগুনী করে যার আছে শোকেরা নীলাভ।
মানুষ প্রেমিক হয়, ধরা দেয় কারো বাহুপাঁশে।
সময় স্তব্ধ করে কারো বুকে কামিনীর ঘ্রাণ
আর কারো স্বেদে মেশে। জীবনের তৃষ্ণায় রতি
মোছেনা বেদনা কোনো, পাশাপাশি খুঁজে নেয় স্থান।
ব্যাথা ঔষধি হয়, একাকার লয়-ক্ষয়-স্থিতি।

নগর পেছাতে থাকে মেনে মানুষের সাধ যত।
প্রাজ্ঞ প্রাচীন বন- তারমাঝে কুঞ্জ লতার।
আদম আবার হয় প্রথম নারীতে উপগত,
এখানে প্রেমিক ঠিক, ভুল তথাগত অবতার।
যাকিছু হয়নি বলা এশরীর তোমায় বলুক,
নোনা স্বেদ কথা কয়, ঠোঁটে-ঠোঁট চিবুকে-চিবুক।

২০১৪-০২-১২ ১৭:৩৭
খুলনা

অক্ষরের কথা

অক্ষরগুলো বৃষ্টির মত পেলব শরীর নিয়ে
ঝরে পড়ে।
অক্ষরগুলো চুম্বনের মতই
ওষ্ঠের কাটাদাগ
হৃদয়ের রক্তক্ষরণ।
অক্ষরগুলো ঘটনার ঘুণপোকা।
সময়ের আবলুস কাঠের টেবিলে
বেদনার ঘুণ
শব্দ তুলছে খুব
আবরণ খসিয়ে দেবার।
এবং দেখেছি আমি অক্ষরগুলো
রাজপথে লেখা হলে
ধারালো শরীরে
স্ট্যাটাসের ভীড় থেকে
মানুষের জিহ্বায় আগুনের তাপ।

আমি রোজ সারি সারি শব্দ বুনেছি।
চেতনার দীপাবলি
কথার বুনটে বেদনা জ্বলেছে প্রগাঢ়।
আমি তার আলো-ভালোবাসা গায়ে মেখে
এখন কবিতা লিখি,
প্রেমিকার স্পর্শের ব্যাখ্যা জানাই বলে জানি
প্রভাতফেরীর গানে চোখ ছলছল কেন
কুচোপাথরের দল পায়ে কেন আদর বোলায়।

বেগুনী ফুল

বুনো লতা
অগভীর কথারা সহজে
বেড়ে ওঠে পথে পথে বিনা পরিচর্যায়।
বৃষ্টি এলেই বেগুনি ফুলের দেখা মেলে।
কথাগুলো কোথা থেকে নীরবতা ধার করে চুপ।
কার্নিশঘেঁষা জল কার কথা কার ব্যথা ধরে?

আমি খুব বেগুনি ফুলের মত
সহজে মাড়ানো যায়-
মাড়ানো যায়না সহজেই।
এড়ানো যায়না জেনো!
পথের পাশের ফুল
ছিঁড়ে নিলে ছিঁড়ে নেয়া যায়
তারসাথে রক্তাভ তোমার হৃদয়।
আমি খুব বেগুনী ফুলের মত
ফুলগুলো নীরবতাস্নাত।

২০১৪-০৭-২৯ ১৭:৩৬
খুলনা