অলওয়েজ

মূল: পাবলো নেরুদা

আমি হিংসা করিনা তাদের
যারা এসেছিল আমারও আগে।

একজন মানুষ
ছুঁয়েছে তোমার কাঁধ, বয়ে আনো,
আর চুলে একশো মানুষ আরো,
তোমার স্তনে ও যোনীতে আরো হাজার মানুষ,
এসো নদীর মতই
ডুবে মরা মানুষের স্রোত
উত্তাল সমুদ্রপথে
ঢেউ ভাঙে মহাকাল, সময়-সলিলে।

সব নিয়ে এসো
আমি অপেক্ষারত
শেষমেশ আমরা একাকী
শেষমেশ তুমি আর আমি
একা এই পৃথিবীতে
বেঁচে থেকে খুঁজে নিতে পথ।

দুঃসময়

এই কবিতাটি আমার বন্ধু আশরাফুল আলমের জন্য। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪তে আনসারুল্লাহ্ বাংলা টীম তাকে হত্যা করে।

পেঁজা পেঁজা মেঘ স্বচ্ছ আকাশ নীল
আমার বুকেও জল জমে এই শীতে।
অযুত শিউলী কারো হাতে স্তুপীকৃত,
মুখে ঢেলে দেয়, চুম্বন আঁকে ঠোঁটে।
সময় সহজ, সহজেই মুছে যায়
একটি একটি মুহুর্ত আমি বাঁচি।
একটি একটি মুহূর্ত হারালেই
আরো একটার সন্ধানে রোজ ছোটা।
আসছে ভীষণ ক্ষমাহীন দুর্দিন
একটা একটা মৃত্যুর ফরমানে
এসে চলে যায় গভীর আঘাত রেখে।

পেঁজা পেঁজা মেঘ রোজ রোজ ভেসে থাকে।
তুলোর মতন, তুলোময় ব্যান্ডেজ
বাঁচাতে পারেনি। রক্তের স্রোতগুলো
বেয়ে চলে গেছে। বঙ্গোপসাগরের
সাথে মিশে গেছে নদী উপনদী বেয়ে।

আমার সবুজে আফগানি ছোপ নেই।
এখানে সূর্য বৃত্তে সুসংহত।
প্রতিদিন দেখি ছিটকে পরিধি থেকে
রক্তের ছোপ প্রান্তের দিকে গাঢ়।
বন্ধু দেখেছ? আকাশের শার্ট লাল।
মিনারের দেখ পেন্সিলে অবসাদ।
বন্ধু আমার আটপৌরে জীবনে
কবিতার আজ সহসা হয়না চাষ।

তবু বিশ্বাস, দৃঢ় বিশ্বাস রাখি।
এই দুর্দিন একদিন যাবে কেটে।
বিনা প্রয়োজনে রক্তের অপচয়
বন্ধ হবেই। নির্বোধ বিশ্বাসে
অপচয় নেই আর কোনো জীবনের।

বন্ধু, জানোতো ঘুমলে স্বপ্ন আসে।
ঘুম ও মৃত্যু হাত ধরাধরি হাঁটে।

২০১৪-১২-০৫ ১৬:৩৩
খুলনা

মেঘের গল্প

মেঘের রঙে আঁক এঁকেছি
বুকের কাছে অন্ধকারে।
আহা এই শহরটা মৌন ভীষণ
আমার কথার অর্থ জানে?

পায়ের নীচে ঘুম বুনেছি,
ঠোঁটের কাছে উষ্ণতায়-
পাঁজর থেকে নোনা শরীর
নিঙড়ে দিলাম, নিমগ্ন এক
রাতের মতই শুদ্ধতা।

কাঁচের আকাশ হাত বাড়িয়ে
ছুঁয়ে দেখি সবকিছুই
মিথ্যে লাগে মিথ্যে ভীষণ,
শুধু যে এই স্কাইস্ক্রাপার-
বুকের কাছে আগলে রাখে
ব্যথার মত অশ্বত্থ
ফাটলে তার নিবিড় বোনা
কংক্রিটেরই ভালোবাসা
সত্যি জানে বুকের কাছে
মেঘলা রঙের গল্পটায়
কতটা জল জমিয়ে রাখা
কতটা তার সত্যতা।

Sep 25, 2015, 8:37 PM
ঢাকা

বৃষ্টি: শহরনামা ০৪

ভিজলো অন্ধকার।
ভিজে গেলো পথ আর
ঘাসের শরীরে দ্যুতি ছড়ায় বরষা।
বুনোফুল, চারুলতা স্নান সেরে এলো।
এলোচুলে ঘ্রাণ তার সর্বনাশের।
সর্বনাশ ভিজলো,
সোঁদা মাটি বৃক্ষবীর্যে গরবিনী।
জানি তুমি বলবেই,
শহরনামায় নেই এই কবিতার স্থান কোনো।
চোখ মেলো, দেখো রোজ কংক্রিট ফুঁড়ে
অশ্বত্থ-বালক রাখে একথার সাক্ষ্যপ্রমাণ।
আমি জানি গাঢ় কালো ভেজা ভেজা পীচের শরীরে
অধর ছুঁইয়ে ধুলো প্রেমরসে ভিজে হলে কাদা
ছেনালপনায় তার কেটে যায় দিন,
বোকামানুষের জিন্সপ্যান্ট
কলুষিত হয় রোজ তার ছেনালিতে।
এসব শুনতে চাও?
অথবা বলতে পারি
একদিন বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে জ্বর হলো যার
কপালে রাখলে হাত
আড়ষ্ঠ বিমূঢ় হলো যার দেহখানি
সেই চায় সবচেয়ে বেশি ছুঁতে,
ভিজে যেতে স্পর্শে আমার।
আমার উঠোন আর তার কারাগার
মাঝখানে অনেক যোজন।
মাঝখানে
ভিজলো তেপান্তর।
ভিজলো গ্রামের পথ।
বুকচিরে এভিনিউ হলো হাইওয়ে
হাইওয়ে, ট্রেনপথ, স্লিপার, পাথর
পাথর ও পথজুড়ে কথার পাহাড়,
পাহাড়টা ভেঙে ভেঙে চুপ করে ফের সমতল।
তার ঘর ব্যালকনি।
ব্যালকনি ভিজে,
ভিজিয়েছে
কাঁদিয়েছে
ফের ভিজিয়েছে তার দেহ।
শহর কি ততটাই যতটুকু চোখে দেখা যায়?
ছুঁলে হাত
সেও বয়ে নিয়ে যায় আমার শহর।
মাঝরাতে যদি
চিবুকে গড়ায় তার জল,
মুছতে না মুছতেই চেয়ে দেখি
মহাপ্লাবনের বেগে ভেসে গেছে
শহর ও শরীরের গলিঘুঁজি পথ।
আমি নুহ নই, তাই ডুবি
বেছে নিই নির্বাণ সর্বনাশের।

৯:৫১ pm, এপ্রিল ২৫, ২০১৫
খুলনা

গলি: শহরনামা ০৩

পৃথিবীর মোট প্রাচুর্য = মোট ক্ষুধা
সমীকরণের ডানপাশ বিস্তৃত
নগর ও বন্দর, আলিশান সৌধ-প্রাসাদে।
অপরপক্ষে সমীকরণের বামপাশ
গাদাগাদি ঘেঁষাঘেঁষি কয়েকটা গলিঘুঁজি পথে।
আমি তেমনই কিছু গলিপথ ঘুরে দেখলাম আজ।
বাস্তবিকই এখানে প্রচুর ধুলোয় আচ্ছন্ন
শতাব্দীব্যপী অন্ধকার রেখেছি কোণঠাসা করে
যেন কিছুতেই আমাদের চোখে না পড়ে।

এপ্রিল ০৩, ২০১৫, ১০:৫৩ pm
খুলনা