সুন্দরবন, আমি ও আপনি
আমার জন্ম থেকে যৌবনের প্রারম্ভ, সবই খুলনায়। একজন ভূমিপুত্র ব্রাত্যজন আমার বাবা। তবে খুব দক্ষিণ বলতে যা বোঝায় আমি সেখানকারও মানুষ নই। হলুদ নোনাপানি আমায় পান করতে হয়নি, সিডর বা আইলায় শহর পর্যন্ত পানি ওঠে না। তাকালেই সুন্দরবন দেখা যায় না। তাই, সুন্দরবনের প্রতি ভালোবাসা গড়ে ওঠার সম্ভবনাই ছিলো না কোনোভাবেই।
২০১৪ এর ডিসেম্বরে প্রথম গেলাম সুন্দরবন। ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের উপর একটি কারিকুলামের বাঙলা অনুবাদের কাজে যুক্ত হলাম। তারপর কিছু শিক্ষক ও ছাত্রদের নিয়ে একটা প্রশিক্ষণ কর্মশালা হলো সুন্দরবনে। সে উপলক্ষে যাবো না যাবো না করে শেষমুহুর্তে যাত্রা।
শহর মানুষের সভ্যতার নিদর্শন। একসময় যেসব মানুষ শুধু বাঁচার প্রয়োজনে গোষ্ঠী, সংঘ, পরিবার গঠন করেছিল, তার ধারাবাহিকতায় এখন দেশ, গ্রাম ও শহর। সেই পুরোনো বাঁচার আর্তি বদলে গেছে। এখন অন্ধকারে বন্য জন্তু আক্রমণ করে না (ডাকাত করে, কখনো পুলিশও করে আজকাল)। না খেয়ে মরে না বরং অপারেশন থিয়েটারে ডাক্তার কিডনিটি কাটে, পারলে গলাটাও। তেমনি স্বতঃস্ফূর্ত সংঘ হারিয়ে এখন সব আইনে বাঁধা। অন্যদিকে, বন প্রাচীন, বন সভ্যতার নিয়ম জানে না। তারমানে যে বিশৃঙ্খলা না তা পরিবেশবিদ্যায় সামান্য পাঠ থাকলেই জানা যায়। সুন্দরবন তার সমস্তকিছু নিয়েই এক অখণ্ড রূপ নিয়ে সামনে দাঁড়ায়। বৈচিত্র্যময় রূপ তার, এমনকি প্রতিটা গাছে, গাছের পাতায়ও যে পরিমাণ পরজীবী দেখতে পেয়েছি তাতেই অবাক হতে হয়। …