নয়াপুরাণ: অকর্মা
প্রজাপতি ব্রহ্মা তখনও প্রজাহীন। এমতবস্থায় প্রায় সকল পুরাণে মানুষের সৃষ্টি করা হয়। ব্রহ্মা একটির বদলে তিনটি প্রজাতি সৃষ্টি করলেন: দেব, মানব, দানব। তারপর শুরু হলো শিক্ষাকার্য।
গুণে পরাকাষ্ঠা দেবতাদের শিক্ষাকার্য শেষ হলো সবার আগে। সমাবর্তনে উপদেশ চাইলে ব্রহ্মা বললেন শুধুমাত্র একটি অক্ষর, “দ”। জিগেস করলেন, “কী বুঝলে?” দেবতারা থাকবে স্বর্গরাজ্যে, যেখানে অনন্ত বসন্ত বিরাজে। ভোগের শেষ নেই। দেবতারা বুঝলেন তাদের রিপু দমন করতে বলা হয়েছে। প্রণাম, অতঃপর প্রস্থান।
মানবেরা সমাবর্তনে এলে, ব্রহ্মা আবারও বললেন, “দ”। মানবেরা বুঝলো তাদের দান করতে বলা হয়েছে। কেবলই সঞ্চয়ের বাহানা কিনা! তারাও চলে গেলো মর্ত্যলোকে সেই উপদেশ নিয়ে।
প্রকট দানবেরা এলো, ব্রহ্মা বললেন, “দ”। তারা বুঝলো তাদের দয়া করতে বলা হয়েছে। তারাও চলে গেলো।
তেমনটাই বলা আছে পুরাণে।
দেবতাদের স্খলন ও পতন হলো অসংখ্যবার, মানুষেরা কেবল সঞ্চয়ই করে চললো, দানবেরা বহুবার স্বর্গ-মর্ত্য দখলে প্রবৃত্ত হলো।
এইসব সৃষ্টিযজ্ঞের পরে ব্রহ্মা সৃষ্টি করলেন একটা জাত যারা ঠিক মানুষ না। যা শেখালেন তা কর্মও না, অপকর্ম না, বরং অকর্ম। অকর্মের কোনো উদ্দেশ্য থাকে না, থাকে স্বাধীনতা। তারা দেবত্বকে করলো উপহাস, মনুষ্যত্বকে করলো প্রশ্ন, দানবকে একটুও ভয় করলো না। সমাবর্তনে ব্রহ্মা যথারীতি বললেন, “দ”।
এমন কিছু তো নেই যা ছাড়া তাদের চলেই না, দমনের শিক্ষার বিশেষ দরকার নেই তাই। সঞ্চয়ের প্রবৃত্তি নেই, নেই দানের প্রয়োজন। আগ্রাসীও নয় তারা। তারা বুঝলো তাদের দুঃখ করতে বলা হচ্ছে। তারা কেবলই দুঃখ করলো। সুরে-সিম্ফনিতে, ভাস্কর্যে-ছবিতে, কবিতায়-গল্পে তারা কেবল দুঃখই করে চললো।