ল্যাম্পপোস্ট
শহরের শেষ সোডিয়াম বাতিগুলোর কয়েকটা তো এই লিঙ্ক রোডেই জীবিত আছে। তাদের আলাপ আছে, কানাঘুষো আছে সদ্যগত যুগের, নিশিভর প্রতারণা আছে মানুষের সাথে। প্রতারক আলোয়, লাল-কে মনে হয় কালো, ক্লান্তিকে মনে হয় বেদনা। অথবা, কে জানে, বেদনাও হয়ত আছে যুগপৎ। লেকের বুক চিরে চলে যাওয়া চাপা রাস্তাটায় কয়েক কদম হাঁটলেই গুলশানের মোড়টা, চর্তুদিক ঘিরে আলো, অথচ এইখানে কেবল আবছায়া, কেবল কয়েকটা পোস্ট হলুদাভ আলো মেলে থাকে।
এটা তো কাব্য করার জায়গা না। বস্তুত, এই শহরের ধাতে কাব্য সয় না। উল্টো তার সর্দিজ্বর হবে। তবুও সন্ধ্যায়, বা মাঝরাতে ফেরার পথে কারো কারো, হঠাৎই নিজের হাত-পা এবং ক্রমে মগজটা অচেনা লাগে, কিছুতেই নিজের মনে হয় না। যার তেমন মনে হয় সে তো কোনোদিন অ্যামজনের দীর্ঘকায় মহীরুহ দেখেনি, বরং ল্যাম্পপোস্টগুলো কেবল চোখের সামনে বড় হতে হতে অতিদূর আকাশের থেকে আলো ঝরায়, ঝরায় যেন কাঁদে, কাঁদে যেন অনেক অভিমান, অভিমান যেন শেষ হওয়ার নয়।
এমন না সে অভিমান দেখেনি কোনোদিন, বাড়িও ফেরে, পরদিন অফিসেও যায়। কেননা, অফিসেরও কাব্য সইবে না, নিউমোনিয়া হবে। তো, সে অফিসে যায়, ওয়ার্মআপ করে, হাসে, কাজ করে, কাজ করে না, কাজ ভালোবাসে কখনো, কখনো হতাশ হয়। হতাশা জঠরের মত, তার নিজস্ব আরামদায়ক ওম আছে, ভালো লাগে না হয়ত, স্বস্তি লাগে।
ফেরা হয় সন্ধ্যায়, ফেরার পথটা গৎবাঁধা। কোথায় কোথায় থামতে হয় একদম জানাশোনা। সিগারেট কেনার দুটো নির্দিষ্ট দোকান, মোজা কিনতে একটা। এই তালিকায় কোথাও ল্যাম্পপোস্ট নাই। তবুও গায়ে ফুমাতো জড়িয়ে ভ্যান গগের মত মোটা মোটা আলো ঠিকরে বেমক্কা সামনে এসে পড়ে। কোনো কোনোদিন, অথবা প্রায়দিনই তার নীচে দাঁড়িয়ে পড়া হয়। কোলাহল, ভীড় তখন কেবলই নিজেদের প্রত্যাহার করে যেন, যেন মহাকাল তার অমোঘ ধৈর্য থেকে একটু স্থিরতা নামিয়ে আনে চারপাশে, একটু নৈঃশব্দ্য। প্রবল ক্লান্তি ভর করে, রাস্তার পাশে রাখা কঙক্রীট কিউবে বসে হাতের সিগারেট টিমটিমিয়ে পুড়তে দেখে সত্যি বলতে কি, কোনো মহৎ চিন্তা বা সুগভীর বোধি ভর করে না। কেবল অচেনা লাগে, কেবল সর্বৈব মিথ্যা মনে হয় সবকিছু। মুখে তিক্ত একটা স্বাদ আসে। বেঁচে থাকার হয়ত, হয়ত ক্ষয়ে যাওয়ার। মানুষের তো সহসা জানা হয়না, হুটহাট নিজের অন্তরাত্মায় অন্যরকম আলো এসে পড়লে নিজেরে ভীষণ হীন লাগে, দীন লাগে।
‘হিজিবিজি’-গুলো বস্তুতঃ কিছু ছেঁড়াখোড়া, খানিকটা অসংলগ্ন এবং অনেকটাই আবেগাক্রান্ত ক্ষুদ্রদেহ লেখা। খানিকটা দিনলিপির মত। একটা বিষয়ে অনেকটা না ভেবে বরং অনেকটা অনুভব করে লেখা।