প্যারালাল ওয়ার্ল্ডস্: মিশিও কাকু

প্যারালাল ওয়ার্ল্ডস্ পপ সায়েন্স লেখকদের মধ্যে যাদের নামডাক শুনি মিশিও কাকু তাদের শীর্ষস্থানীয়দের একজন। পুরো বইটির কথা বলতে গেলে লেখা সচ্ছল, সুপাঠ্য। পপুলার সায়েন্সের বইয়ের জন্য যা অবশ্যই দরকারি। তা না হলে আমার মত অভাজনেরা বিপদে পড়ে যায়। লেখার ধরণ খানিকটা সেগানের অনুগামী মনে হয়েছে, চ্যাপ্টারের শুরুতে ক্যোটেশন, দার্শনিক কথাবার্তা সব মিলিয়ে।

বইটাতে কোয়ান্টাম ফিজিক্স ও স্ট্রিং থিওরির বেশকিছু ব্যাপারে আলোচনা আছে, অবশ্যই তা গণিতবিবর্জিত, সহজবোধ্যরূপে। তার যথাযথতার বিচার করার মত ক্ষমতা আমার নেই, তবে আমার মনে হয়, মূল ব্যাপারটা খানিকটা বুঝতে পেরেছি।

এগুলো ছাড়াও বইটির বিষয়ের মধ্যে ছিল সৃষ্টিতত্ত্ব, প্যারালাল ইউনিভার্স এবং উচ্চতর ডাইমেনশনগুলো নিয়ে কথাবার্তা।

বেশকিছু ব্যাপারে যদিও আমার দ্বিধা আছে। অবশ্য কোয়ান্টাম ফিজিক্স কমনসেন্সের ধার ধারে না। ব্যাপারটার বৈজ্ঞানিক অংশ আমি কমই বুঝি, দার্শনিক অংশটাই বেশি চোখে পড়লো। এর সাবজেক্টিভ নেচার নিয়ে আমি খানিকটা দ্বিধান্বিত, সন্দিহান এর যথাযথতা নিয়ে। যেমন ধরুন, আদ্রেই লিন্ডের এই কথাগুলো:

For me as a human being, I do not know any sense in which I could claim that the universe is here in the absence of observers. We are together, the universe and us. The moment you say that the universe exists without any observers, I cannot make any sense out of that. I cannot imagine a consistent theory of everything that ignores consciousness. A recording device cannot play the role of an observer, because who will read what is written on this recording device. In order for us to see that something happens, and say to one another that something happens, you need to have a universe, you need to have a recording device, and you need to have us… In the absence of observers, our universe is dead.

এই কথাগুলোর সাথে একমত হওয়া আমার জন্য কষ্টকর। আমার কাছে মোটেও পরিষ্কার না লিন্ডে কনশাসনেস বলতে কি বোঝেন। আমি যতদূর বুঝি চেতনা কোনো জাদুমন্ত্র নয়, আত্মার মত আধিভৌতিক বা অলৌকিকও নয়। বরং খুবই লৌকিক ব্যাপার। কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলাফল। তা যদি হয় তাহলে মহাবিশ্বের অস্তিত্ব থাকা না থাকার ব্যাপার তার গুরুত্ব আর দশটা পাথর বা নক্ষত্রের চেয়ে বেশি নয়, এবং অবশ্যই লিন্ডে সাহেবের রেকর্ডিং ডিভাইসের চেয়েও নয়। রেকর্ডিং ডিভাইসটি হয়ত আরো সাদামাটা মেশিন, কিন্তু চেতনাও একধরণের মেশিনেরই ফলাফল বটে। আমার কাছে মহাবিশ্ব বরং এই বইতে পাওয়াই আরেকটা কবিতার মত:

A man said to the universe:
“Sir, I exist!”
“However,” replied the universe,
“The fact has not created in me
A sense of obligation.” — Stephen Crane

একথা আমি মানছি যে আমার পড়াশোনার যা গণ্ডি এত ভারি ভারি ব্যাপার আমার মাথায় ঢোকেনি হয়ত পুরোটা। এই কথাগুলো যেমন:

Although Einstein was shocked by this result, it was too good to be true. Over the years, problems were discovered that rendered Kaluza’s idea useless. First, the theory was riddled with divergences and anomalies, which is typical of quantum gravity theories. Second, there was the much more disturbing physical question: why don’t we see the fifth dimension? When we shoot arrows into the sky, we don’t see them disappear into another dimension. Think of smoke, which slowly permeates every region of space. Since smoke is never observed to disappear into a higher dimension, physicists realized that higher dimensions, if they exist at all, must be smaller than an atom. For the past century, mystics and mathematicians have entertained the idea of higher dimensions, but physicists scoffed at the idea, since no one had ever seen objects enter a higher dimension.

আমার স্বল্প জ্ঞানে আমি বুঝতে পারছি না কেন অন্য ডাইমেনশনগুলো এটমের চেয়ে ছোট হতে হবে। মনে করুন, আপনি নিউটনীয় পদার্থবিদ্যার যুগে বসবাস করেন। সময় আপনার কাছে একমুখী একটা স্রোতমাত্র। আপনি বোধে সময় এভাবেই ধরা দেয়। বস্তুত কমনসেন্সের ঘরানায় সময় এভাবেই দেখি আমরা। কিন্তু আইনস্টাইন যখন সময়কে মাত্রা ধরলেন আপনি অন্তত গাণিতিকভাবে বুঝতে পারলেন একটা ইমাজিনারি চতুর্মাত্রিক গ্রাফে সময় ও স্থানের তিনটি মাত্রা এই মোট চারটি মাত্রার জন্য আপনি ইউনিক একেকটা অবস্থান পাবেন। যদিও আপনি সময়কে সেভাবে বুঝতে পারেন না, কিন্তু গাণিতিকভাবে আপনি বুঝতে পারছেন। কেন অন্য ডাইমেনশনগুলোর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা এমন হতে পারে না। হয়ত আমরা ত্রিমাত্রিক জগতে যা দেখছি তার জন্য অন্যান্য মাত্রাতেও মান আছে। আমাদের বোধগম্যতার পর তা নির্ভরশীল নাও হতে পারে।

বইটার একটা বিষয়েই আমার আপত্তি আছে তা হলো বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষত, সৃষ্টিতত্ত্বে ইশ্বরের ভূমিকা নিয়ে ‘অমুক বিজ্ঞানী মনে করেন, তমুক বিজ্ঞানী বলেছেন’-ধরণের কিছু কথাবার্তা। মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাস আর প্রমাণিত জ্ঞান এক না। কারো মনে করা না করা দিয়ে ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কি নেই নির্ণয় করা যায় না। বস্তুতঃ সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে আমরা যত জানবো তত বিষয়টা পরিষ্কার হবে। ধর্ম স্বাভাবিকভাবেই মানুষ পারিবারিক শিক্ষার মাধ্যমে পায় আর খুব কম মানুষই এটা নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবে। ব্যক্তিগত মতামতগুলোর বদলে কিছু যুক্তিগ্রাহ্য কথাবার্তা বললে বরং ভালো হত।

সব মিলে বইটা ভালো লেগেছে, আমার মত, অবশ্যপাঠ্য একটি বই।