দি প্রফেট: কাহলিল জিবরান

দি প্রফেট বইটা বা বইটার লেখক কেউই আমার সমালোচনার তোয়াক্কা করে না। দুই-ই জনপ্রিয় এবং শেষোক্তজন বহুকাল আগে মৃত। বইটা নাতিদীর্ঘ, কিন্তু আঁটো বাঁধুনি। কাহলিলের লেখা কাব্যিক, সুপাঠ্য। সত্যি কথা বলতে এত কাব্যিক গদ্য আমি আর পড়িনি।

এ হচ্ছে সেই জাতের বই যা থেকে মানুষ উদ্ধৃতি দিতে দিতে ক্লিশের পর্যায়ে নিয়ে যায়। অথচ এই বইটি আধুনিক পাঠকের কাছে যতটা না আদর্শের মাপকাঠি হতে পারে তারচেয়ে বেশি হতে পারে চিন্তার খোরাক।

বইটা আমায় ভাবিয়েছে। আমি বইটার সাথে দর্শনগত জায়গায় পুরোপুরি একমত নই। এবং, তাতে আমার রস নিতে একটুও সমস্যা হয়নি। আমি মুগ্ধ হয়ে বইটা পড়েছি। কাহলিল ইশ্বর বিশ্বাসী, এই বইয়ের নবীও তেমনই। কিন্তু তা অনেকটা প্রকৃতিবাদী চেতনা, সেমিটিজমের মত নয়। এই ঈশ্বর সর্বব্যাপী, আমরা এই ঈশ্বরের অংশ। যদি একান্তই একজন অবিশ্বাসী এই বই থেকে শিক্ষা নিতে চায় সামান্য পরিবর্তন করেই তা নিতে পারে।

বইটায় সাহসি কিছু কথা আছে যা আমরা এখনো বলতে সাহস পাইনা। বইটায় সমস্তকিছুর ওপর এক অপরিসীম মমতা আছে। মানুষের সকল ন্যায়বোধ যেন ভালোবাসার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় এইটাই বইটার উপজীব্য। প্রকৃতির সাথে সহজ-স্বাভাবিক সম্পর্কই আসলে সঠিক ধর্মাচরণ। আমরা তা পারিনি, তাই কিছু কথা আজকের দিনে দাঁড়িয়েও নতুন লাগবে। পোশাক নিয়ে প্রফেট বলেন,

Your clothes conceal much of your beauty, yet they hide not the unbeautiful. And though you seek in garments the freedom of privacy you may find in them a harness and a chain.

কত সহজ, অথচ আমরা এখনো ভাবতে পারি না। সত্যিই কি পোশাক আমাদের কারাগার হয়নি? বিশেষ করে নারীদের? অথবা, আইনের কথাই ধরি। আইন সম্পর্কে প্রফেটের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে আইন যে কোনোভাবেই প্রকৃতির স্বাভাবিকতাকে অবদমিত না করে। তিনি তার শহরের মানুষদের বলছেন:

People of Orphalese, you can muffle the drum, and you can loosen the strings of the lyre, but who shall command the skylark not to sing?

অথচ, আমরা এই কাজটাই করি। পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ আছে যেখানে স্বাভাবিকতাও দণ্ডনীয়।

বইটার আধ্যাত্মিকতার অংশটির সাথে আমার মতাদর্শ সঙ্গতিপূর্ণ না। তবে প্রফেটের জীবনব্যাপী সাধনার সাথে আমার একটা মিল আছে। তিনি মানুষের থেকে দূরে থেকে সকল মানুষকে দেখেছেন, আরো উপর থেকে, এক বৃহৎ মানুষ হিসেবে। আমিও সেই চেষ্টা করি। আমিও চাই মানুষের সভ্যতার রেখাচিত্রে ফুটে ওঠা সকলের গোপন মানুষটা দেখতে। যেদিন তার কাছে আমার কবিতা পৌঁছবে সেদিন সেগুলো কবিতা বলে গণ্য হবে।