মিডনাইট'স চিল্ড্রেন: সালমান রুশদি
লিখতে বসে বুঝতে পারছি, এই বইটার সমালোচনা লেখা সহজ হবে না। সমালোচনাটায় একটা গণ্ডি রাখতে হবে যেন নিরসকারীতে1 রূপ না নেয়। তো, প্রথমত, দেখার বিষয় পড়ে কেমন লেগেছে। ম্যারি পেরিরা’র চাটনির মত। ঘাসফড়িঙের মত উজ্জ্বল রঙের, এবং নিজস্ব স্বাদের। একটু টক, টক না বলে বলা উচিত ‘চটপটা’ স্বাদের। বলিউডি মুভির মত। রঙচঙে ক্লাইম্যাক্সে ভরা। আসলে পড়ার শুরুতে এটা একটু খারাপ লাগছিল, কিন্তু রুশদি জানেন কোথায় থামতে হয়। আর দশজন ভালো লেখকের মত সংযমের গুণটা তারমধ্যেও আছে। এমন লেখা, এবং টিভি সিরিয়াল চোখে পড়ে- যেখানে ঐতিহাসিক সময়ের অন্য একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, একটি সমান্তরাল বাস্তবতা তৈরী করা হয়। এটা সেরকমই একটা উপন্যাস। খানিকটা ডিসটোপিয়ার ঘ্রাণও পাই বুঝি।
সংক্ষেপে বলতে গেলে ঘটনা পরম্পরার যে সারল্য থাকা প্রয়োজন, আমি ভীত, মিডনাইট’স চিল্ড্রেনে তা নেই। সেলিম সিনাই, আমাদের কেন্দ্রীয় চরিত্র, যার জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট মধ্য রাতে, অর্থাৎ ভারত ও তার জন্ম একইসাথে(এবং হাসপাতালে আরেকটি এরকম সন্তানের সাথে বদলে গিয়ে সেলিম সিনাই হিসেবে বড় হয়) শৈশবে আবিষ্কার করে, সে একজন টেলিপ্যাথ। এবং, ওই মধ্যরাতের একঘন্টার মধ্যে জন্মানো আরো কিছু ছেলেমেয়েরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো ক্ষমতার অধিকারী। এরাই মিডনাইট’স চিল্ড্রেন। নামের সার্থকতা পাওয়া গেলো। অতএব, গল্পের দিকে আমি আর এগোবো না।
আমার বইটা ভালো লেগেছে। বেশিই ভালো লেগেছে। ভালো লেগেছে আদম আজিজের ঈশ্বরের সাথে দ্বৈরথ, আমিনা সিনাইয়ের একটু একটু করে স্বামীকে ভালোবাসার চেষ্টা, সেলিম সিনাইয়ের রোগ, আশাবাদী হওয়ার রোগ। চরিত্রগুলো প্রাণবন্ত, কখনো কখনো হয়ত একটু বাস্তবতাবিবর্জিত। কিন্তু, এটা শুধু বাস্তবতার গল্প না। পরাবাস্তবতা, অবাস্তবতা সমস্তকিছু নিয়ে এই উপন্যাস। যেমনটা ভারতবর্ষ। বহুরকম বিপরীতধর্মী মতাদর্শ, জাদু ও পুরাণ যেখানে মিলেমিশে থাকে।
১৯৪৭ এর কিছু আগে, আদম আজিজের যৌবন থেকে ‘৪৭ এর পর ৩১ বছর উপন্যাসের সময়কাল। এইসময়ের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে সেলিমকে পাওয়া গেছে। পাওয়া গেছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধেও। আর এই বইতে যুদ্ধটা পাক-ভারত যুদ্ধ না। যুদ্ধটা মুক্তিবাহিনীর সাথেই হানাদার বাহিনীর।
বইটা আমার খুব প্রিয় বইগুলোর একটা হয়ে থাকবে। আমি রুশদির আর কোনো বই এখনো পড়িনি। জানিনা ওর লেখার ধরনটাই এমন কিনা। তবে এই বইটার জন্য এই ধরনটাই হয়ত দরকার ছিল। বইয়ের ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার সময় এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। তারপরও, সবকিছু মিলিয়ে বইটা চমৎকার।
স্পয়লার :stuck_out_tongue: ↩